ঝালকাঠির রাজাপুর উপজেলায় ঘূর্ণিঝড় ইয়াস ও পূর্ণিমার প্রভাবে বিষখালী নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। এতে ডুবে প্রাণ গেছে মো. সিয়াম হোসেন (৮) ও সামিয়া আক্তার (৪) নামে দুই শিশুর।

বুধবার (২৬ মে) বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে উপজেলার মেডিকেল মোড় সংলগ্ন ও বড়ইয়া এলাকায় পৃথক এই ঘটনা ঘটে। সিয়াম উপজেলার পিংড়ি গ্রামের মো. ফারুক হাওলাদারের ছেলে। সে আজিজিয়া নূরানী কিন্ডারগার্টেন মারদাসার দ্বিতীয় শ্রেণিতে পড়তো। আর সামিয়া আক্তার বড়ইয়া এলাকার সাইলু আকনের মেয়ে।

এদিকে রাজাপুরে ব্যাপক হারে পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় এবং বিষখালী নদীতে বেড়িবাঁধ না থাকায় পানি ঢুকে উপজেলার বিভিন্ন এলাকা প্লাবিত হয়েছে। ডুবে গেছে ফসলি জমি, রাস্তাঘাট, ঘর-বাড়ি, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। সেই সঙ্গে ভেসে গেছে কয়েকশ পুকুরের মাছ।

সিয়ামের বাবা ফারুক হাওলাদার জানান, ব্যবসার কারণে স্ত্রী-সন্তান নিয়ে মেডিকেল মোড় এলাকায় ভাড়া বাসায় থাকেন তিনি। বুধবার সকাল থেকে পাশের কোলায় (মাঠ) সহপাঠীদের সঙ্গে খেলা করছিল সিয়াম। দুপুর থেকে তাকে পাওয়া যায়নি। পরে অনেক খোঁজাখুঁজির এক পর্যয়ে মাঠের মধ্যে পুকুরে ভাসা অবস্থায় তাকে পাওয়া যায়। উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে আসলে কর্তব্যরত চিকিৎসক সিয়ামকে মৃত ঘোষণা করেন।

সামিয়ার পরিবার জানায়, ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের প্রভাবে বিষখালী নদীর পানি বেড়ে এবং বেড়িবাধ না থাকায় লোকালয় প্লাবিত হয়েছে। এ কারণে সামিয়াদের ঘর পানিতে ডুবে যায়। তার বাবা সাইলু ঘর ছেড়ে পরিবারের সবাইকে নিয়ে প্রতিবেশী মোশারেফের বাড়িতে আশ্রয় নেন। ওই বাড়ির সামনের খালের পাড়ে বসে বন্যার পানিতে খেলা করতে গিয়ে হারিয়ে যায় সায়মা। পরে তাকে খোঁজাখুঁজি করে সন্ধ্যার দিকে ওই খালে ভাসতে দেখে স্বজনরা। তাকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে আসলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।

স্থানীয়রা জানায়, বিষখালী নদীর পানি স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ৫ থেকে ৬ ফুট বৃদ্ধি পেয়েছে। গত দুইদিন ধরে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি হচ্ছে। ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে উপজেলার বড়ইয়া, পালট, নিজামিয়া, চরপালট আবাসন, উত্তমপুর, বাদুরতলা, মানকিসুন্দর, নাপিতের হাট, ডহরশংকর ও মঠবাড়ি এলাকায় জোয়ারের পানি ডুকে পড়েছে। রাতের জোয়ারে পানি আরও বৃদ্ধি পাওয়ার আশঙ্কায় বেড়িবাঁধ না থাকায় বিষখালী নদীর তীরবর্তী হাজারো মানুষ এখন আতঙ্কে রয়েছে।

উপজেলা সহকারী মৎস্য কর্মকর্তা মো. মোজ্জামেল হক জানায়, পানি বৃদ্ধির কারণে দুই শতাধিক পুকুরের মাছ ভেসে গেছে। এতে প্রায় ৩০ থেকে ৩৫ লাখ টাকার ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা করা হচ্ছে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মোক্তার হোসেন বলেন, যাদের ঘর-বাড়ি পানিতে ডুবে গেছে, তাদেরকে আশ্রয় কেন্দ্রে রেখে খাবার ব্যবস্থা করা হয়েছে।

রাজাপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. শহিদুল ইসলাম বলেন, সিয়ামের পরিবারের কোনো অভিযোগ না থাকায় ময়নাতদন্ত ছাড়ায় মরদেহ হস্তান্তর করা হয়েছে। এদিকে সামিয়া যেখানে ঢুকে মারা গেছে সেখানে ফোর্স পাঠানো হয়েছে। তার পরিবারের সঙ্গে কথা বলে পরবর্তী আইনগত ব্যবস্থা নেয়া কবে।

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Discover more from শুদ্ধস্বর ডটকম

Subscribe now to keep reading and get access to the full archive.

Continue reading